ওমার ফারুক লুক্স নাস্তিককে বলছি
লিখেছেন লিখেছেন ইসহাক মাসুদ ২৪ জুন, ২০১৩, ০৫:১৩:০০ বিকাল
প্রথমে জানতাম না সেদিন ছিল শবেবরাত। কয়েক বছর আগের কথা। ফ্রান্স থেকে ইংল্যান্ড ইংলিশ চ্যানেলের উপর দিয়ে ফেরি পার হচ্ছিলাম। বিশাল বিশাল ফেরি চলে ইংলিশ চ্যানেলের উপর দিয়ে। একেকটা ফেরিতে থাকে শত শত গাড়ি আর হা্জার হাজার যাত্রী। পার হতে সময় লাগে দুই ঘন্টা। মহাসমুদ্রের উপর চমৎকার জোৎস্না আর আকাশের বিশালতার কারনে অসাধারণ এক স্মৃতি হয়ে থাকে প্রতিটা যাত্রীর জীবনে দূর্লভ এই দুই ঘন্টা সময়। তাই সবাই ইচ্ছে মত উপভোগ করতে চায় এই সময়টা। একটা মিনিটও নষ্ট করা যাবে না। ফেরির প্রতিটা ফ্লোরেই আছে ড্রিংস্কবার আর ড্যান্সফ্লোর। ফেরি ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সব যাত্রীরা যখন বিভিন্ন ধরনের পানীয় পান করতে করতে মিউজিকের সঙ্গে নাচতে শুরু করলো। এরই মধ্যে দেখি এক হুজুর। দাড়ি টুপি আর জোব্বা পরা এক আফ্রিকান বয়স্ক ভদ্রলোক। হাতে একটা জায়নামাজ নিয়ে হন্ন্যে হয়ে কি যেন খুঁজছেন। তারপর হঠাৎ করেই ড্যান্সফ্লোরের এক কোণায় জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়তে দাঁড়িয়ে গেলেন। তার নামাজ পড়া দেখে সঙ্গে সঙ্গে সবাই স্বশ্রদ্ধভাবেই মিউজিক আর নাচ বন্ধ করে হা করে তাকিয়ে রইলো বৃদ্ধের দিকে। তাকিয়ে রইলো পুরো ১০ মিনিট। কয়েকজন অবশ্য বৃদ্ধকে নিয়ে হাসাহাসিও করেছে। আমারও কি ভাগ্য, নামাজ শেষ করে বৃদ্ধ এসে আমার পাশেই বসলেন। আমার কালো চুল আর কালো চোখ দেখে হয়তো আমাকে তার নিজের ধর্মের মানুষ মনে করেছিলেন। আমি বললাম, ফেরিতে অন্য কোন নিরিবিলি জায়গা পাননি?
তিনি বললেন, না পাইনি, অনেক খুঁজেছি। আজ শবে -বরাত। নামাজ না পড়ে শান্তি পাচ্ছিলাম না।
আমি বললাম, ভালোই করেছেন। সবাই আপনার নামাজের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে নাচগান বন্ধ করে দিয়েছিলো।
তিনি বললেন হ্যা, কিন্তু কয়েকজন হাসাহাসিও করেছে, আমি শুনেছি। কিস্তু আমি নামাজ পড়ে সবার জন্যই দোয়া করেছি।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি দোয়া করেছেন?
তিনি বললেন আল্লাহ যেন সবাইকে হেদায়েত দেয়, আর এই ফেরিটা যেন নিরাপদে ইংল্যান্ড পৌঁছায়।
বললাম, গত কয়েকশত বছর ধরে আপনাকে ছাড়া আর কারও দোয়া দুরুদ ছাড়াই এই পথে প্রতিদিন অনেক গুলো ফেরি পারাপার করছে। আর ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মানুষের হেদায়েত অনেক আগেই হয়ে গেছে। এ বিশাল ফেরি দেখে বোঝেন না? তারা ঈশ্বর আর দোয়া দুরুদের উপর ভরসা করে নেই। তাদের মেধা, পরিশ্রম, সততা আর প্রযুক্তি তাদের কাছে ঈশ্বরের চেয়ে অনেক বড় শক্তি।
বৃদ্ধ আমাকে কাফের ভেবে উঠে চলে গেলেন। আমি চলে গেলাম কাফেরদের সঙ্গে নাচতে।
______________________________________
উপরের বক্তব্যটি omar Farook lux নামক এক নাস্তিকের বক্তব্য। আমি তার লেখার নিচে কমেন্ট করতে পারি নাই বিধায়, তার বক্তব্যটি উল্লেখ করে আমার ক্ষোভটি প্রকাশ করলাম।
আমি কখনো বাংলাদেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ হয় নাই। কিন্তু শুনেছি, ইংল্যান্ড আমেরিকা, কানাডা ইত্যাদি দেশের মানুষ অনেক ভদ্র অনেক সহিসনু। আপনার বক্তব্যে তা প্রমান পেলাম। তারা ভিন্ন ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে গান বাজনা ও তাদের বিনোদন কিছুক্ষনের জন্য বন্ধ রেখেছে। আমি বুঝতে পারিনি যে, একজন নাস্তিক কেন সহিসনু নয়। আপনি ঐ মসুলিম ব্যক্তির শ্রদ্ধা রেখে আপনার বক্তব্যটি না পেশ করলেও চলত। কিন্তু আপনি তা করেননি। আপনি প্রমান করলেন, আপনি একজন বাঙ্গালী, একজন অসহিসনু নাস্তিক। আমি অনেক নাস্তিকের লেখা পড়ি, আমি তাদেরকে পাই অভদ্র, দাম্ভিক।তারা মানুষকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করতে জানেনা। তারা যেকোন মানুষকে অপমান করতে পারে। জানি না তারা তাদের পিতা-মাতাকে সম্মান করেন কি না।
বিষয়: বিবিধ
১৩০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন